Tuesday, August 23, 2022

বন্দেমাতারাম থেকে বিসমিল্লাহ, পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক : কি বললেন বাংলার টলিউডের পরিচালকরা

 



 শ্রীজা ঘোষ ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

পর্দায় আসতে চলেছে বাংলার গর্ব সাহিত‍্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস আনন্দমঠ। তবে  তা এবার পরিচালনা করবেন  দক্ষিণের বিক্ষ্যাত পরিচালক অশ্বিন গঙ্গারাজু। তিনি 'বাহুবলি' ও 'ইগা' ছবিতে পরিচালক এস.এস.রাজামৌলির সহকারী ছিলেন।

আনন্দমঠ থেকে  অনুপ্রাণিত এই ছবিটির নামকরণ করা হয়েছে '1770'। আর এই ছবির পোস্টার সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। নেটিজনদের একাংশের দাবি বাংলায়  রয়েছে সাহিত্যের খনি। এমন এক কালজয়ী উপন্যাসকে নিয়ে দক্ষিণ ইন্ডাস্ট্রি ভাবতে পারলো অথচ অবহেলিত হয়ে রইল বাংলাতেই। বাংলার পরিচালকরা চিরকাল দক্ষিণ সিনেমা টুকে গেল  অথচ বাংলায়  এমন রত্ন থাকতেও তাকে অবহেলিত করল বাংলার পরিচালকরা। এই সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য দক্ষিণ ইন্ডাস্ট্রিকে অভিনন্দনও জানান অনেকে।






এদিকে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত পরিচালিত ও ঋদ্ধি সেন অভিনীত বিসমিল্লাকে ঘিরেও সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠেছে নানা প্রশ্ন। তাদের মতে এক বিশেষ সম্প্রদায়কে পোষণ করতেই তৈরি হচ্ছে এই ধরনের সিনেমা। একজনই কেউ লিখেই বসেন দক্ষিণ ভারত যখন বলছে বন্দেমাতরম  তখন বাংলা বলছে বিসমিল্লাহ। তাদের অনেকেরই ক্ষোভ যে বাংলার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে দক্ষিণ ভারতের পরিচালকরা তুলে ধরছেন। অথচ বাংলায় তা হচ্ছে না।


 ঋদ্ধি সেনের একটি পোস্ট নিয়ে এক জনৈক বলেন  এক হাতে গীতা আর এক হাতে তলোয়ার নিয়ে স্বাধীনতার শপথ নেওয়া বাঙালি, বন্দেমাতরম মন্ত্রে দীক্ষিত বাঙালি… বলে কিনা ‘বলতেই হবে বিসমিল্লা


এই বিষয় Bong Journal কে অরণ্যদেব খ্যাত  পরিচালক দেবাশীষ সেন শর্মা জানান বাংলা‌তেও আনন্দমঠ হয়েছিল । সেখানে অভিনয় করেছিলেন‌ বসন্ত চৌধুরী। তিনি বলেন‌ আনন্দমঠ ছবিটি টলিউডের‌ ক্ষেত্রে বানানো খুব ব্যয়সাধ্য । আমরা বাইরের কাজ দেখে এতটাই এক্সপোজ হয়ে যাচ্ছি। যদি ওই স্কেল আচীভ না করতে পারি তাহলে লোকে হাসবে। আমাদের‌ অর্থনৈতিক দীনতা চোখে‌ পড়বে। দক্ষিনের সেই খরচ করার সাধ্য আছে বলে তারা‌ এটা বানাতে পারে।


অন্যদিকে আর এক অন্যতম পরিচালক রাজদীপ ঘোষ‌ বলেন‌  সিনেমাতে এই ভাগাভাগি করা ঠিক নয়। সিনেমা ভাগ করছে কিছু মানুষ যারা হঠাৎ‌ ক্রিটিক হয়েছে,যাদের কোনো কাজ‌ নেই ,যারা‌ সিনেমা শিল্পের সাথে যুক্ত নয়। ঘরে বসে বক্তৃতা দিতে অনেক ভালো লাগে। বাংলা থেকেই বড় বড় লেখকের‌ গল্প বেরিয়েছে। ভাগ করার কি আছে সাউথ‌ ইন্ডিয়া করছে বাংলার‌ লোক করতে পারছেনা‌। যে লোকগুলো এই কথা বলে বাংলার‌ পরিচালক‌,শুটিং ইউনিট কিভাবে কাজ‌ করছে এসে দেখে যাক। একদম কাজ‌ বন্ধ করার‌ থেকে নাই মামার‌ থেকে কানা মামা হচ্ছে। হ্যাঁ নিশ্চয়ই ভালো হবে। সিনেমা খারাপ হয়না ।যার‌ যার‌ পয়েন্ট অফ ভিউ‌ থেকে সিনেমা তৈরি হয়। আমার ভালো নাই লাগতে পারে ,মনটা আমার আলাদা‌ আপনার মনটা আলাদা ,আপনি‌ ভাবেন‌ একরকম আমি ভাবি একরকম‌ । আমার‌ পড়াশোনা একরকম ,আপনার‌ পড়াশোনা একরকম । কিন্তু খারাপ বলার অধিকার‌ নেই।


এদিকে এখনকার  সুপরিচিত আর এক পরিচালক সায়ন বসু চৌধুরীর মতে বাংলাতেও অনেক  ভাল সিনেমা হচ্ছে। দক্ষিণ ভারত , বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে মানে এই নয় যে আমারা বানাতে পারব না। এখানেও ভাল গল্প নিয়ে কাজ হয় । তাই এটা এমন কোন বড় বিষয় বলে আমার মনে হয়না। বরং এটার একটা পজিটিভ দিক হল আমাদের সাহিত্য আরও দূর পর্যন্ত পৌছাবে মানুষের কাছে অন্য ভাষার মাধ্যমে। আর সাহিত্য সকলের। ওভাবে মাপকাঠি করে দেওয়া উচিত না।  হ্যারি পটার বা লর্ড অফ দি রিংস  এর মতই এরম গল্পের কোন ভাষা হয়না। 

তবে সাহিত্য নির্ভর ছবি এখন কিছুটা কম হচ্ছে সেটা কিছুটা ঠিক। এর  একটা কারন হল এখন অনেক বেশি মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। আরবান মুভি বেশি হচ্ছে। কিন্তু নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে আবার একটা সময় আসবে যখন ব্যাক টু ব্যাক সাহিত্য নির্ভর ছবি হবে।


বিসমিল্লার বয়কট নিয়ে সায়নকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন  মানুষ এখন ট্রেন্ডে গা  ভাসিয়ে চলছে। আমি মনে করি সিনেমা ভাল হলে সেটা আজ  নয় কাল অবশ্যই চলবে।


আনন্দমঠ উপন্যাসটি অষ্টাদশ‌ শতাব্দীর‌ দ্বিতীয়ার্ধে হিন্দু সন্ন্যাসীদের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সসস্ত্র সংগ্ৰাম নিয়ে লেখা। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসে চরম‌ অরাজকতার সময়। এই সময় সাধারন‌ হিন্দুদের মুসলমান‌ শাসনকর্তা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর দ্বারা‌ হত্যা‌ করা‌ ছিল‌ সাধারন‌ ঘটনা। ভারতে যখন বিভিন্ন রাজত্বগুলি‌ ভেঙ্গে পড়ছিল‌ এবং দেশীয় রাজাদের‌ শক্তি ক্ষয় হয়ে আসছিল‌ সেই সময় সন্ন্যাসীরা সশস্ত্র সংগ্ৰাম করেছিল এইসব আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে।  


প্রথম ১৯৫২ সালে হেমেন‌ গুপ্ত হিন্দীতে আনন্দমঠ বানিয়েছিলেন। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন ছবির‌ চিত্রনাট্য লিখবেন ভি.বিজয়েন্দ্র প্রসাদ।এই সিনেমাটি নির্মাণ করছেন‌ লেখক ও‌ চলচ্চিত্র নির্মাতা রাম‌কমল মুখার্জি।এই সিনেমাটি বাংলা, হিন্দি,তেলেগু,তামিল,মালায়ালাম‌ ও কন্নড় ভাষায় তৈরি হবে।




1 comment:

Thanks for your comment. Feel free to contact for any queries, suggestions or any proposal.