Friday, December 30, 2022

চিরবিদায়ের দিনেও উঠে এল কাব্যে উপেক্ষিতদের কথা




সুদীপ পাকড়াশী 

অবশেষে তিনি বিদায় নিলেন। প্রত্যাশিতভাবেই, ৮২ বছর বয়সে। দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন। ফুটবল পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ তার জন্য প্রতিটি দিন প্রার্থনায় বসেও,  মনে মনে হয়ত ছিল তার শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায়। গোটা ব্রাজিল আজ পেলে-ময়! 'অল রোডস লিড টু স্যান্টোস'-সেই বিখ্যাত ক্লাবের স্টেডিয়ামে যাচ্ছে মানুষ। তাকে একবার শেষ দেখার জন্য। সারাজীবন যে ক্লাবের মাঠ ছিল তার সঙ্গী। মারিও জাগালোর মত তার ফুটবলজীবনের সতীর্থরা, জিকো, রোনাল্ডিনহো, লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, কিলিয়ান এমব্যাপের মত তার পরবর্তী প্রজন্মের কিংবদন্তিরা-প্রত্যেকের শেষ শ্রদ্ধায় তিনি সর্বোত্তম!


পেলের ফুটবল পরিসংখ্যান আজ ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। তার ফুটবল দক্ষতার কথাও লিখতে লিখতে আজ ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। সুর্যের আলোর মত তা গনগনে। বিশ্বফুটবলের ইতিহাস তার সামনে নির্দ্বিধায় মাথা নুইয়েছে। তবু, পেলের চিরবিদায়ের দিনেও ব্রাজিলের অন্যতম সেরা পরিসংখ্যানবিদ এমিলিও কাস্তানোর লেখায় উঠে এল, মানুষ পেলে কিন্তু ফুটবলার পেলের উচ্চতায় পৌঁছতে পারেননি!




সাল ১৯৭০, বিশ্বকাপ জয়ের পর সতীর্থদের কাঁধে চেপে ফুটবল জগতের ব্ল্যাকপার্ল পেলে 




পেলের করা গোলসংখ্যা আসলে ১২৮৩ নয়, ৭৫৭টি! কিন্তু সেটাও মাত্র ৮১২টি ম্যাচে! অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেটে। কাস্তানোর পরিসংখ্যান বলছে, পেলের ৫২৬টি গোল এসেছে প্রদর্শনী ম্যাচ থেকে। এই বিষয়টির চেয়েও কাস্তানোর পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। 

ব্রাজিলের এক ম্যাগাজিনে এই বর্ষীয়ান পরিসংখ্যানবিদের প্রশ্ন, পেলের ঐতিহাসিক সাফল্য তো তার একার চেষ্টায় আসেনি। সঙ্গে ছিলেন তার অবিস্মরণীয় সতীর্থরা। তাদের কতজনের কথা তিনি মনে রেখেছিলেন পরবর্তীকালে? একবার তার দেখা সেরা ১২৫জন ফুটবলারের তালিকা তৈরি করেছিলেন পেলে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সেই তালিকা থেকে বাদ গ্যারিঞ্চা, ভাভা এবং ডিডি! আরও আছে, সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন গারসন, জোয়ারজিনহো, জিটো, গিলমার এবং জাগালোরও নাম! এরা কারা? পেলের সাড়ে সাতশো আন্তর্জাতিক গোলের প্রায় প্রত্যেক গোলে যাদের কারও না কারও অবদান ছিল! যেমন গারসন। কাস্তানোর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পেলেকে হাজারের বেশি গোলের পাস দিয়েছেন এই ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার! গারসন বলেওছিলেন সাক্ষাৎকারে, "আমি পাস দেওয়ার জন্যই খেলাটা শিখেছি, গোল করার জন্য জন্য নয়।" সেই মানুষটাকে পরবর্তীকালে ভুলে গেলেন ফুটবল সম্রাট!



তাছাড়া পেলে তো তিনটে বিশ্বকাপ খেলেননি! আসলে দুটো বিশ্বকাপে ছিল তার চোখে পড়ার মত উপস্থিতি! ১৯৬২-র বিশ্বকাপে তিনি মাঠে ছিলেন মাত্র দুটো ম্যাচে! ব্রাজিলের সেই বিশ্বকাপ জয়ের আসল নায়ক কে? গ্যারিঞ্চা! যাকে পেলেরও ওপরে বসিয়েছিলেন ফুটবল বিশ্বের বহু বিশেষজ্ঞ। ১৯৬২-তে-ই গ্যারিঞ্চা পেয়েছেন ব্যালন-ডি-ওর! তার আগে ফিফা-র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠদের তালিকায় গ্যারিঞ্চার ঢুকে পড়া। অথচ, পেলের ১২৫ জন পছন্দের ফুটবলারের তালিকায়ও নেই গ্যারিঞ্চা! 

উশৃঙ্খল জীবন যে সময় তাকে অপরিসীম দারিদ্র্যে পৌঁছে দিয়েছে তখন কোথায় ফুটবল সম্রাট! আর লিওনেল মেসি? সেই একই ব্যালন-ডি-ওর হাতে নিয়ে ট্রফিটা উৎসর্গ করছেন তার বার্সেলোনার সতীর্থ জাভি-কে! যার পা থেকে বেরনো ঠিকানা-লেখা পাসেই ক্লাবের জার্সিতে মেসির অধিকাংশ গোল! অথচ, পেলের তালিকায় গারসনের নামই নেই! এমিলিও কাস্তানোর পর্যবেক্ষণ প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। কিন্তু চাঁদকে দেখতে হলে তার কলঙ্কগুলোকেও দেখতে হবে! চোখ বুঁজে থাকার উপায় নেই! 

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment. Feel free to contact for any queries, suggestions or any proposal.